ভূমিকা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা | NCTB BOOK
616

রোহান নবম শ্রেণির ছাত্র। সে তার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রত্যাশা করে। রাশেদ সাহেব একজন কৃষক। তিনি এ বছর জমি থেকে ভালো ফলন প্রত্যাশা করেন। সুমনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্রী। সে তার বিবিএ ডিগ্রি শেষ করে একটি ভালো চাকরি আশা করে। এখানে রোহানের জিপিএ ৫ পাওয়া, রাশেদ সাহেবের জমি থেকে ভালো ফলন এবং সুমনার ভালো চাকরি পাওয়া প্রতিটি বিষয় অনিশ্চিত। কারণ প্রতিটি বিষয় ভবিষ্যতের সাথে জড়িত। রোহান জিপিএ ৫ পেতে পারে, নাও পেতে পারে, রাশেদ সাহেবের জমিতে এ বছর ভালো ফলন হতে পারে, নাও পারে এবং সুমনা ভালো চাকরি পেতে পারে; নাও পেতে পারে । এভাবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অনিশ্চয়তা বিদ্যমান থাকে। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ন্যায় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম অনিশ্চয়তা পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ ভবিষ্যতে কোম্পানির পণ্যের আশানুরূপ বিক্রি হবে কি না, প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন করতে পারবে কি না, প্রত্যাশিত মূল্যে কাঁচামাল ক্রয় করতে পারবে কি না-এরূপ অসংখ্য অনিশ্চয়তা থাকে। অনুরূপভাবে একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ পাবে কি না, একটি কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহ পাবে কি না এসব অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয় ।

এসব অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রকৃত ফলাফল প্রত্যাশিত ফলাফলের চেয়ে কম বা বেশি হয়। প্রকৃত ফলাফল প্রত্যাশিত ফলাফল থেকে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাকেই ব্যবসা অর্থায়নে ঝুঁকি বলা হয়। যেমন: কোম্পানি আশা করছে, আগামী বছর ২০% নিট মুনাফা লাভ করবে, কিন্তু প্রকৃত লাভ হলো ১৫% । এখানে, এই ৫% বিচ্যুতি ঝুঁকির উৎস। নিম্নে আরো কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হলো:

মনে কর, একটি কোম্পানি আগামী তিন বছর যথাক্রমে ৫০ লক্ষ টাকা, ৬৫ লক্ষ টাকা এবং ৭৫ লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা করে। কিন্তু তিন বছর শেষে দেখা গেল উল্লেখিত বছরগুলোতে কোম্পানির পণ্য বিক্রি হয় যথাক্রমে ৪৫ লক্ষ টাকা, ৬৬ লক্ষ টাকা এবং ৭১ লক্ষ টাকা। আবার একজন বিনিয়োগকারী বছরে প্রতি শেয়ারে ১৫ টাকা লভ্যাংশ প্রত্যাশা করে একটি কোম্পানির শেয়ার কেনে। কিন্তু বছর শেষে দেখা গেল, কোম্পানি প্রতি শেয়ারে মাত্র ১০ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করে। বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সিদ্ধান্তের প্রত্যাশার থেকে প্রাপ্তির একটি ব্যবধান থাকে এবং এ ব্যবধান হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য কোনো বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশিত আয় থেকে প্রকৃত আয় বেশি হলেও ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। যেমন: উক্ত বিনিয়োগকারী প্রতি শেয়ারে যখন ১৫ টাকা লভ্যাংশ প্রত্যাশা করে বছর শেষে ২০ টাকা লভ্যাংশ পায়, তখনো এই ৫ টাকা বিচ্যুতি ঝুঁকির উৎস বলে বিবেচিত। কারণ ওই অবস্থায় প্রকৃত আয় কেন প্রত্যাশিত আয় থেকে বেশি হলো সেই কারণ বিনিয়োগকারীর কাছে অজানা, এই কারণে সেটাও ঝুঁকি।

ঝুঁকির আরেকটি উদাহরণ এই রকম। দুটি বিনিয়োগের প্রথমটি থেকে আমরা গত তিন বছর ১০% হারে মুনাফা পেয়েছি। দ্বিতীয় বিনিয়োগ থেকে আমরা গত তিন বছর ৫%, ১০% ও ১৫% মুনাফা পেয়েছি। এখানে দুটি বিনিয়োগ প্রতিটির অর্জিত মুনাফার গড় সমান বা ১০% কিন্তু প্রথম বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত ও দ্বিতীয় বিনিয়োগ ঝুঁকিযুক্ত। কারণ ঝুঁকির আরেকটি ধারণা হলো আয়ের উত্থান-পতন। বেশি উত্থান-পতন হলে বেশি ঝুঁকি এবং উত্থান-পতন না হলে ঝুঁকি নেই ।

Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...